
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সম্প্রতি এক নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক হতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার-২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ)’ ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’ মেনে চলতে বলা হয়েছে।
নির্দেশিকাটি সরকারি খাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করার লক্ষে তৈরি।
২০১৯ সালে মন্ত্রপরিষদ বিভাগ থেকে প্রকাশিত নির্দেশিকাটি ২০১৬ সালের সংস্করনের হালনাগাদ রূপ। নির্দেশিকাটিতে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয় ও মাঠপ্রশাসনে যারা কাজ করবেন তাদের নাগরিক সম্পৃক্ততায় কার্যকর ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সক্ষমতার ভিত্তিতে উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম বাছাই করতে হবে। এছাড়া সরকারি একাউন্টে প্রতিষ্ঠানের নাম ও লগো ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
কন্টেন্ট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রকাশিত তথ্য হতে হবে সত্য, প্রাসঙ্গিক ও অ-ব্যক্তিগত। গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট সংরক্ষণ ও অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সংযুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভাজনমূলক, বৈষম্যমূলক বা অশালীন কন্টেন্ট প্রকাশ নিষিদ্ধ।
সরকারি একাউন্টে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ করা যাবে না। আত্মপ্রচার, লিঙ্গ বৈষম্য বা ভিত্তিহীন গুজব প্রচার নিষিদ্ধ।
সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে এমন কন্টেন্ট কোনভাবেই শেয়ার বা লাইক দেওয়া যাবে না। জাতীয় ঐক্য ও চেতনার বিরোধী কোন তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভাজন, জাতিগত বৈষম্য বা অস্থিরতা উসকে দেওয়া যাবে না। সাইবার বুলিং, হয়রানি বা ঘৃনাত্মক বক্তব্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
দায়িত্ব ও শাস্তি
সরকারি কর্মচারীরা নির্দেশিকা লঙ্ঘনের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। নির্দেশিকা লঙ্ঘন হলে সরকারি আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ-২০২৫
২০২৫ সালের ২১ মে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এই অধ্যাদেশ জারি করেন। অধ্যাদেশে মোট ৫১টি ধারা রয়েছে। এটি বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্ত আইন-২০২৩ বাতিল করে নতুন কাঠামো প্রনয়ণ করেছে, যা অপব্যবহার করে সাংবাদিক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৯৫ শতাংশ মামলা হয়েছিল।
নতুন অধ্যাদেশটি একটি শক্তিশালী সাইবার কাঠামো তৈরি করেছে। এর অধীনে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা (এনসিএসএ) এবং জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হয়েছে।
আগের আইনের ৯ টি বিতর্কিত ধারা এই অধ্যাদেশ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মানহানি, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় প্রতিকের প্রতি আক্রমনাত্মক কন্টেন্ট প্রকাশ এবং মিথ্যা, হয়রানিমূলক বা হুমকিমূলক কন্টেন্ট প্রচার। আগের আইনের এই ধারাগুলোতে করা সব মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
এআই এর মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলিং, যৌন হয়রানি বা পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর মতো বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া অনলাইন জুয়া বা বাজি, বিজ্ঞাপন প্রচার বা সহায়তায় জড়িত থাকার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এর জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কম্পিউটার সিস্টেমে অবৈধ প্রবেশ বা হ্যাকিং, তথ্য চুরি বা ডিজিটাল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করা অপরাধ হিসেব গণ্য হবে। শাস্তি হিসিবে ৫-৭ বছরের কারাদন্ড অথবা ১ কোটি টাকা জরামানা।
সাইবার জালিয়াতি, পরিচয় চুরি করে সম্পর্ক, অনলাইন প্রতারণা করলে ২-৫ বছরের কারাদন্ড অথবা ১ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত। অনলাইন বেটিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সাইবার স্টকিং, প্রতিশোধমূলক পর্নো, অনুমতি ছাড়া অন্তরঙ্গ ছবি প্রচার, যৌন হয়রানি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে ৩-৭ বছরের কারাদন্ড অথবা ৫-১০ লাখ টাকা জরিমানা। এসব ক্ষেত্রে ক্ষতি প্রমানের প্রয়োজন নেই।
অন্যকে অপরাধে সহায়তা বা ছদ্মবেশে অপরাধ সংঘঠন করলে ১-৩ বছরের কারাদন্ড বা ২-৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত।
ধর্মীয় বা জাতিগত ঘৃণা ছড়ালে ২-৫ বছরের কারাদন্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত। এ ক্ষেত্র ভুয়া অবিযোগকারীও একই শাস্তি ভোগ করবেন।
এই অধ্যাদেশ ও নির্দেশিকাগুলোর সমন্বিত লক্ষ হলো- উদ্ভাবন, নিরাপত্তা ও জবাবদিহিতার ভারসাম্যে একটি নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা।


