
মহররমকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে রয়েছে অসংখ্য ভুল ধারনা ও কুসংস্কার। যা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রচলিত কয়েকটি কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা করা হলো।
অলীক বর্ননা
মহররম মাসের গুরুত্ব বোঝাতে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন। যেমন, এ মাসে ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পান, ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান, ইদরিস (আ.) কে আকাশে তুলে নেওয়া হয়। আবার অনেকে বলেন এ মাসে কেয়ামত সংঘঠিত হবে। তবে, এসব কথার দৃঢ় কোন ভিত্তি নেই। (আল-আসারুল মারফুআ, আব্দুল হাই লাখনবি: ৬৪-১০০; মা সাবাতা বিস-সুন্নাহ ফি আয়্যামিস সানাহ, আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবি:২৫৩-২৫৭)
বিয়েশাদিতে কঠোরতা
অনেক মুসলিমের ধারনা এ মাসে বিয়ে করলে তা শুদ্ধ হবে না। কারণ এতে ইমাম হোসেইন (রা.)-কে অপমান করা হয়। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছ থেকে এ ধরনের কোন নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত নেই। (সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস:১৯১৬ এর টীকা)
খাবারে নিষেধাজ্ঞা
অনেকেই মহররম মাসে মাছ, শাক, মিষ্টি জাতীয় খাবার খান না। এটা সঠিক নয়। অন্যান্য মাসের মতো ইসলাম এ মাসেও কোন হালাল খাবার হারাম করেনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) মহররমসহ বছরের সবসময় হালাল খাবার গ্রহন করতেন। আল্লাহ বলেছেন, ”মুমিনগণ আল্লাহ যেসব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” (সুরা মায়দা আয়াত:৮৭)
নামাজের উদ্ভট রেওয়াজ
হাদিসে আশুরার দিন রোজা পালনের কথা এলেও ওই দিন দিনে অথবা রাতে কোন বিশেষ নামাজের বিধানের কথা আসেনি। আশুরার দিন জোহর ও আসরের মধবর্তী সময়ে অথবা রাতে অনেক নামাজ কিংবা নির্দিষ্ট সুরা বহুবার পাঠ করাকে পূণ্যময় ভাবা সঠিক নয়। সরলপ্রান মুসলমানদের মন জয় করতে অনেকে ওয়াজে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন, যা সঠিক নয়। ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই। (মাওজুআত লি ইবনিল জাওজি:২/৪৫-৪৬; লাআলি লিশ শায়খ জালালুদ্দিন সুয়ুতি:২/৫৪; তানজিহ লি ইবনে আররাক: ২/৮৯: আল-ফাওয়াইদ লিশ শাওকানি: ১/৭৩)
ভিত্তিহীন গালগল্প
মহররম মাসে অনেকেই ভিত্তিহীন গালগল্প বা কেচ্ছাপাঠে মেতে উঠেন। যেখানে নানা ধরনের বর্ণনা শোনা যায়, যা ইসলামের মূল বর্ণনার সঙ্গে মেলে না। যেমন: উড়িয়া যায়রে জোড়া কবুতর ফাতেমা কেন্দে কয়- আজ বুঝি কারবালার আগুন লেগেছে মোর কলিজায়। মা ফাতেমার কান্দন শুনে আরশ থেকে আল্লাহ কয়- যাও গো জিব্রিল বাতাস করো মা ফাতেমার কলিজায়, পুত্রশোকে কলিজা জ্বলে, বাতাসে কি ঠান্ডা হয়!
এগুলো সত্যি নয়, কারণ ফাতেমা (রা.) মৃত্যুবরণ করেন ১১ হিজরিতে আর, হুসাইন (রা.) শহীদ হন ৬১ হিজরিতে। দুজনের মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান ৫০ বছর। তাহলে ফাতেমা (রা.) তার সন্তানের জন্য কান্না করেছেন তা কি করে সঠিক হয়? (আত-তবাকাতুল কুবরা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত: ৮/২৩)
অনেকে মনে করেন আশুরা মানে কারবালা। এ কারণেই মহররমের ১০ তারিখ এত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার। এটি সঠিক নয়। কেননা আশুরার মর্যাদা ও ঐতিহ্য ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই স্বীকৃত।


